Header Ads Widget

Responsive Advertisement

জাকির নায়েক ও দেওবান্দের ফতওয়া

ডা: জাকির নায়েক এবং দেওবান্দের ফাতওয়া

প্রশ্ন:
সম্মানিত মুফতি সাহেবান,দারুল উলুম দেওবন্দ!
(আল্লাহ তা’আলা আপনাদেরকে দীর্ঘজীবি করুন)
ﺍﻟﺴﻼﻡ ﻋﻠﻴﻜﻢ ﻭﺭﺣﻤﺔ ﺍﻟﻠﻪ
আমার জানার বিষয় হল ডা. জাকির নায়ক ব্যক্তিটি কেমন? তার আকিদা-বিশ্বাস কি আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাতের আকিদা- বিশ্বাসের সাথে সামাঞ্জস্যশীল? হাদিসের ব্যাখ্যা ও কুরআনের তাফসীরের ক্ষেত্রে তার
মতামত কতটুকু গ্রহণ যোগ্য? এবং ফিকহ সাস্ত্রে তার মাযহাব কি? তিনি কোন ইমামের   অনুসারী? আমরা তার আলোচনা শুনে তার উপর আমল করতে পারব কি না? দয়া করে সন্তুষজনক উত্তর দিয়ে ধন্য করবেন।
নিবেদক রিয়াজ আহমদ খাঁন আলিয়া প্রিন্টার্স, উত্তর সুইয়া, ইলাহাবাদ,
ভারত।

             ---:দৃষ্টি আর্কষণ:---
ডা. জাকির নায়ক সর্ম্পকে প্রতিনিয়ত
ধারাবাহিকভাবে প্রশ্ন আসছেই, এ প্রশ্নটিও
ঐ ধারবাহিকতার অংশ বিশেষ। এখানে তার
আকিদা-বিশ্বাস ও মাযহাব এবং কুরআন-
হাদিস সম্পর্কে তার ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণের মূল্যায়ন,
বিস্তারিত আলোচনার আবেদন করা হয়েছে।
তাই,ডা.জাকির নায়কের আলোচনা ও রচনাকে 
সামনে রেখে একটি সবিস্তার সমাধান
পেশ করা হল।

উত্তর: --
ﺑﺴﻢ ﺍﻟﻠﻪ ﺍﻟﺮﺣﻤﻦ ﺍﻟﺮﺣﻴﻢ ،ﺣﺎﻣﺪﺍ ﻭﻣﺼﻠﻴﺎ ﻭﻣﺴﻠﻤﺎ
                     ﺍﻟﺠﻮﺍﺏ ﻭﺑﺎﻟﻠﻪ ﺍﻟﺘﻮﻓﻴﻖ ﻭﺍﻟﻌﺼﻤﺔ

ডা. জাকির নায়ক সাহেবের বক্তব্য ও আলোচনায় বিশুদ্ধ আকিদা-বিশ্বাসের বিকৃতি,পবিত্র কুরআনের
মনগড়া অপব্যাখ্যা,বিজ্ঞানের চুলচেরা বিশ্লেষণের আতঙ্ক,ইসলাম  বিদ্ধেষী পশ্চিমা বিশ্বের চেতনা এবং ফিক্বহী মাসায়িল সমূহে সালাফে সালেহীন ও উম্মতের
অধিকাংশ ওলামায়ে কিরামগণের মত ও পথ
থেকে বিচ্যুতির মত ভ্রষ্টপূর্ণ কথাবার্তা পাওয়া যায়।
এবং তিনি মুসলিম জাতিকে মুজতাহিদ
ইমামগণের অনুসরণ থেকে বিরত,দ্বীনি মাদরাসা সমূহ
থেকে মানুষকে বিমুখ এবং হক্বানী ওলামায়ে কিরামদেরকে জনসাধরণের কাছে সন্দেহান্বিত ও হেয় প্রতিপন্ন করার অপ- প্রয়াস চালিয়ে যাচ্ছেন। নিম্নে তার
ভ্রান্তিপূর্ণ কিছু আলোচনার উদাহরণ দেয়া হলো।
এক আক্বিদা সর্ম্পকে ডাঃ জাকির নায়ক সাহেবের কয়েকটি মন্তব্য: আক্বিদা- অত্যন্ত স্পর্শকাতর বিষয়!
তাতে সমান্য পদস্খলন অনেক সময় ঈমানের
জন্য আশঙ্কাজনক হয়ে দাঁড়ায়। এই আক্বিদা সর্ম্পকে ডাঃ জাকির নায়ক সাহেবের  মন্তব্য-

       (ক) ‘বিষ্ণু’ ও ‘ব্রাহ্মম’ বলে আল্লাহ তা‘য়ালাকে ডাকা বৈধ?! ডাক্তার সাহেব এক প্রোগ্রামে বলেন,
“আল্লাহ তা‘য়ালাকে হিন্দুদের উপাস্যদের নামে ডাকা বৈধ,যেমন ‘বিষ্ণু অর্থ রব এবং ‘ব্রাহ্মণ’ অর্থ খালিক
তথা সৃষ্টিকর্তা। তবে শর্ত হল এই বিশ্বাস রাখা যাবে না যে, বিষ্ণুর চারটি হাত রয়েছে এবং পাখির উপর আরোহিত”। (জাকির নায়েক প্রণীত “ইসলাম আওর
আলমী আখওয়াত”-৩৩}

অথচ অনারবী সে সকল শব্দ দ্বারাই কেবল এক
মাত্র আল্লাহ তা‘য়ালাকে ডাকা যায়, যা কেবল
মাত্র আল্লাহ তা‘য়ালার জন্যই নির্দিষ্ট। তা ব্যতীত অন্য কোন শব্দ দ্বারা জায়েজ নয়। তাহলে বিষ্ণু,ব্রাহ্মণ যা হিন্দুদের প্রতীক তা দ্বারা আল্লাহকে ডাকা কিভাবে বৈধ
হতে পারে?

        (খ) আল্লাহ তা‘য়ালার কালাম (কুরআন শরিফ)
কিরূপ? তা বিজ্ঞান ও টেকনোলজী দ্বারা প্রমাণ করা জরুরি?! ডাক্তর সাহেব এক প্রোগ্রামে বলেন,মানুষ
মনে করে এ পবিত্র গ্রন্থটিই আল্লাহ তা‘য়ালার কালাম (বাণী)। কিন্তু যদি আপনি জানতে চান যে, কোনটি প্রকৃত আল্লাহর কিতাব তাহলে আপনাকে সর্বশেষ
পরীক্ষা তথা ‘আধুনিক বিজ্ঞান ও টেকনোলজী’ দ্বারা তা প্রমাণ করাতে হবে। যদি তা আধুনিক
বিজ্ঞান সমর্থন করে তাহলে ধরে নিতে হবে তা আল্লাহর
কিতাব । (আল জাওয়াবু আলা সালাসিনা যাওয়াবান
আলা আন জাকিরুল হিন্দ ওয়া আসহাবু ফিকরিহী মুনহারিফীনা দ্বালালান লিশ শায়েখ ইয়াহইয়া আল হাজুরী} এ কথা দ্বারা ডাক্তার সাহেবের পবিত্র
কুরআন সর্ম্পকে গুমরাহীমূলক নির্ভীকতা ও চিন্তার
বিপথগামীতা এবং অধুনিক বিজ্ঞানের প্রতি অতিভক্তির বিপদজনক মনোভাব প্রমাণিত হয়। তিনি প্রতিনিয়ত
পরিবর্তনশীলঅধুনিক বিজ্ঞানের গবেষণাকে আসমানী কিতাব বিশেষত আল্লাহ তা‘য়ালার পবিত্র কালাম
‘কুরআন’ মজিদের সততা প্রমাণের মানদণ্ড
সাব্যস্ত করেছেন। অথচ কুরআন মজিদ আল্লাহ
তা‘য়ালার কালাম বা বাণী হওয়ার বড় প্রমাণ
তার ‘ই‘জাজ’ তথা তার রচনাশৈলী ও বর্ণনাভঙ্গী। যার উপমা দিতে মানুষ অক্ষম। এ বিষয়ে আল্লাহ তা‘য়ালা কুরআনের বিভিন্ন স্থানে চ্যাল্যাঞ্জ ঘোষণা করেছেন।

      (গ) ফাতওয়া দেয়ার অধিকার সকলের রয়েছে?!
ডাঃ জাকির নায়ক সাহেব এক স্থানে বলেন,‘যে কোন মানুষের ফতোয়া দেয়ার অধিকার রয়েছে’ কারণ
ফতোয়া দেয়া মানে অভিমত ব্যক্ত করা । {প্রাগুক্ত}
এখানে ডাঃ জাকির নায়েক ফাতওয়া দেওয়ার
মত গুরুত্বপূর্ণ বিষয় যা আল্লামা ইবনুল কায়্যিম
রহ.-এর ভাষ্যমতে,মুফতি আল্লাহ তা‘য়ালার
বিধান বর্ণনায় মহান রাব্বুল আলামীনের ভাষ্যকার ও স্থলাভিষিক্ত হয়ে স্বাক্ষরের যিম্মাদার হয়ে থাকেন।
ﻟﻢ ﺗﺼﻠﺢ ﻣﺮﺗﺒﺔ ﺍﻟﺘﺒﻠﻴﻎ ﺑﺎﻟﺮﻭﺍﻳﺔ ﻭﺍﻟﻔﺘﻴﺎ ﺇﻻ
ﻟﻤﻦ ﺍﺗﺼﻒ ﺑﺎﻟﻌﻠﻢ ﻭﺍﻟﺼﺪﻕ ﻓﻴﻜﻮﻥ ﻋﺎﻟﻤﺎ
ﺑﻤﺎ ﺑﻠﻎ ﺻﺎﺩﻗﺎ ﻓﻴﻪ ﻭﻳﻜﻮﻥ ﻣﻊ ﺫﻟﻚ ﺣﺴﻦ
ﺍﻟﻄﺮﻳﻘﺔ ﻣﺮﺿﻲ ﺍﻟﺴﻴﺮﺓ ﻋﺪﻻ ﻓﻲ
ﺃﻗﻮﺍﻟﻪ ﻭﺃﻓﻌﺎﻟﻪ ﻣﺘﺸﺎﺑﻪ ﺍﻟﺴﺮ ﻭﺍﻟﻌﻼﻧﻴﺔ ﻓﻲ
ﻣﺪﺧﻠﻪ ﻭﻣﺨﺮﺟﻪ ﻭﺃﺣﻮﺍﻟﻪ ﻭﺇﺫﺍ ﻛﺎﻥﻣﻨﺼﺐ
ﺍﻟﺘﻮﻗﻴﻊ ﻋﻦ ﺍﻟﻤﻠﻮﻙ ﺑﺎﻟﻤﺤﻞ ﺍﻟﺬﻱ ﻻ
ﻳﻨﻜﺮ ﻓﻀﻠﻪ ﻭﻻ ﻳﺠﻬﻞ ﻗﺪﺭﻩ ﻭﻫﻮ ﻣﻦ ﺃﻋﻠﻰ
ﺍﻟﻤﺮﺍﺗﺐ ﺍﻟﺴﻨﻴﺎﺕ ﻓﻜﻴﻒ ﺑﻤﻨﺼﺐ ﺍﻟﺘﻮﻗﻴﻊ
ﻋﻦ ﺭﺏ ﺍﻷﺭﺽ ﻭﺍﻟﺴﻤﻮﺍﺕ ، ﻓﺤﻘﻴﻖ ﺑﻤﻦ
ﺃﻗﻴﻢ ﻓﻲ ﻫﺬﺍ ﺍﻟﻤﻨﺼﺐ ﺃﻥ ﻳﻌﺪ ﻟﻪ
ﻋﺪﺗﻪ ﻭﺃﻥ ﻳﺘﺄﻫﺐ ﻟﻪ ﺃﻫﺒﺘﻪ ﻭﺃﻥ ﻳﻌﻠﻢ ﻗﺪﺭ
ﺍﻟﻤﻘﺎﻡ ﺍﻟﺬﻱ ﺃﻗﻴﻢ ﻓﻴﻪ ) ﺍﻋﻼﻡ
ﺍﻟﻤﻮﻗﻌﻴﻦ- 1/91 )
[অর্থ: হাদীস বর্ণনা এবং ফাতওয়া দেওয়ার
যোগ্য কেবল আলেমও সত্যবাদীদের।
সুতরাং সে হবে আলেম, সাথে সাথে সত্যাবাদীতা। 
এবং যার বাহ্যিক অভ্যান্তরিণ অবস্থা হবে সৌন্দর্যমন্ডিত। কথাবার্তা ও কর্মে হবে ন্যায়পরায়ণ। যার প্রকাশ্য অপ্রকাশ্য ও বাহ্যিক ও অভ্যন্তরিণ অবস্থা হবে সমান সুন্দর। যখন রাজ্যের বাদশাহ হওয়ার পদটিকে এমন মর্যাদা দেয়া হয়ে যে, এর পদর্যাদাকে কেউ অস্বিকার করে না, আর এটাতো সবচে’ উঁচু পর্যায়ের পদ, সুতরাং আসমান জমিনের রবের
প্রতিনিধিত্বের পদটি কতটা মর্যাদাপূর্ণ হবে?
প্রকৃত বিষয় হল যাকে এ স্থানে অধিষ্ঠিত করা হবে, তাকে অভিজ্ঞ, দক্ষ এবং স্বীয় পদমর্যাদা সম্পর্কে হতে হবে পূর্ণ ওয়াকিফহাল।
{ইলামুল মুআক্বিয়ীন-১/৯১}]
ডাক্তার সাহেব গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টিকে “স্বীয় অভিমত”বলে একটি সাধারণ শব্দদিয়ে ব্যাখ্যা দেয়ার মাধ্যমে শুধু নিজের জন্য নয় বরং অভিজ্ঞ ও অনভিজ্ঞ সকলের জন্য ফতোয়ার দ্বার উন্মুক্ত করে দিলেন। আর
তিনি পবিত্র কুরআনের এ আয়াত-
ﻓَﺎﺳْﺄَﻟُﻮﺍ ﺃَﻫْﻞَ ﺍﻟﺬِّﻛْﺮِ ﺇِﻥْ ﻛُﻨْﺘُﻢْ ﻟَﺎ ﺗَﻌْﻠَﻤُﻮﻥَ)43 )
অর্থ: যদি তোমরা না জেনে থাক তাহলে জ্ঞানীদের কাছ থেকে জেনে নাও {সূরা নাহল-৪৩, সূরা আম্বিয়া-৭}
সেই সাথে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিম্নের হাদিসটি সম্পূর্ণরূপে ভুলে গেলেন;
ﻣﻦ ﺍﻓﺘﻰ ﺑﻐﻴﺮﻋﻠﻢ ﻛﺎﻥ ﺇﺛﻤﻪ ﻋﻠﻰ ﻣﻦ ﺃﻓﺘﺎﻩ
(অর্থাৎ যে ব্যক্তি পূর্ণ জ্ঞানী হওয়া ছাড়া (অশুদ্ধ) ফতোয়া দেয় ঐ (অশুদ্ধ) ফতোয়ার গুনাহ
ফতোয়া প্রদানকারীর উপরই বর্তাবে। (সুনানে আবু দাউদ, হাদীস নং-৩৬৫৯৩, বাবু তাফসিরিল কুরআন আন রাসূলিল্লাহ অধ্যায়। দুই- তাফসীরে-
মনগড়া ব্যাখ্যা তথা অর্থবিকৃতি : কুরআন মজিদের তাফসীরের বিষয়টি খুবই সুক্ষ্ম। কেননা মুফাসসির আয়াত থেকে আল্লাহ তা‘য়ালার উদ্দেশ্য নির্দিষ্ট
করেন যে,আল্লাহ তা‘য়ালা এই অর্থই বুঝিয়েছেন। তাই অযোগ্য লোকদের এ বিষয়ে পা রাখা অত্যন্ত বিপদজনক। হাদিস শরিফে বর্ণিত আছে-
ﻣﻦ ﻗﺎﻝ ﻓﻲ ﺍﻟﻘﺮﺁﻥ ﺑﺮﺃﻳﻪ ﻓﺄﺻﺎﺏ ﻓﻘﺪ
ﺃﺧﻄﺄ
অর্থ: যে ব্যক্তি কুরআনের তাফসীর কেবল
নিজের জ্ঞান দিয়ে করে, তাহলে সে ঘটনাচক্রে সঠিক বললেও তাকে ভুলকারী সাব্যস্ত করা হবে। (তিরমিযি শরিফ-হাদীস নং-২৯৫২) অন্য বর্ণনায় এসেছে যে,
ﻭﻣﻦ ﻗﺎﻝ ﻓﻲ ﺍﻟﻘﺮﺁﻥ ﺑﺮﺃﻳﻪ ﻓﻠﻴﺘﺒﻮﺃ ﻣﻘﻌﺪﻩ ﻣﻦ ﺍﻟﻨﺎﺭ
অনুবাদ- যে ব্যক্তি স্বীয় যুক্তি দিয়ে কুরআনের
তাফসীর করে সে তার আবাস জাহান্নামকে বানিয়ে নিল। {সুনানে তিরমিযী, হাদীস নং-২৯৫১} তাই মুফাসসিরের জন্য বেশ কিছু শর্তাবলী রয়েছে। যেমন,
১- কুরআনের সকল আয়াতের উপর দৃষ্টি থাকতে হবে।
২- হাদীসের ব্যাপারে থাকতে হবে অগাধ পান্ডিত্ব।
৩. আরবী ভাষা ও ব্যকরণ তথা নাহু,ছরফ,ইশতিক্বাক্ব,এবং অলঙ্কার শাস্ত্রে রাখতে হবে গভীর পাণ্ডিত্য। ডাক্তার সাহেবের মধ্যে এ সকল শর্তের
একটিও যথাযথভাবে পাওয়া যায় না। তার না আছে আরবী ভাষা ও আরবী ব্যকরণ সর্ম্পকে যথাযথ পারঙ্গমতা। না আছে হাদিস ভাণ্ডারের উপরকোন
সুগভীর পড়াশোনা। আর আরবী সাহিত্য ও অলঙ্কার শাস্ত্রেও নন তেমন জ্ঞানী। (এ কথাগুলো নিম্নের
উদাহরণ দ্বারা স্পষ্ট হবে ইনশাআল্লাহ) অপরদিকে তাফসীরের ক্ষেত্রে বিপদগামী হওয়ার যত উপকরণ হতে পারে,সবকটিই তার মধ্যে বিদ্যমান,যেমন রাসুলুল্লাহ  সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম,সাহাবায়ে কিরাম  ও তাবেয়ীন থেকে বর্ণিত তাফসীর
থেকে বিমুখিতা,কালের চিন্তনে প্রভাবিত
হওয়া, এবং পবিত্র কুরআনের বিষয়বস্তুকে ভুল
বুঝা ইত্যাদি। তাই তিনি দশের অধিক আয়াতকে স্বীয় অজ্ঞতা চর্চার ক্ষেত্র বানিয়েছেন। নিম্নে তার কিছু উদাহরণ দেয়া গেল। প্রথম আয়াত
ﺍﻟﺮﺟﺎﻝ ﻗﻮﺍﻣﻮﻥ ﻋﻠﻰ ﺍﻟﻨﺴﺎﺀ
(অর্থ: পুরুষরা নারীদের উপর কৃর্তত্বশীল)
এ আয়াতের তাফসীর করতে গিয়ে ডাক্তার
সাহেব বলেন,অনেকে বলেন ‘ক্বাওয়্যাম’ অর্থ এক
স্তর উর্ধেিম হওয়া। কিন্তু বাস্তবে ‘ক্বাওয়্যাম’
শব্দটি “ইক্বামাতুন” শব্দ থেকে নির্গত।  ‘ইক্বামাতুন’ অর্থ দাঁড়ানো। তাই ‘ইক্বামাতুন’- এর মর্ম হল যিম্মাদারিতে একস্তর উর্ধে উ হওয়া,সম্মান ও মর্যাদায় উর্ধে‘ী হওয়া নয় । (খুতুবাতে জাকির নায়েক-২৯৫, ফরীদ বুক
ডিপো) ডাক্তার সাহেব পশ্চিমা বিশ্বের
‘সমানাধিকার’ নীতির সমর্থনে উক্ত আয়াতের
মনগড়া তাফসীর করতে গিয়ে সম্মান ও মর্যাদায় পুরুষের এক স্তর উর্ধেকর হওয়াকে অস্বীকার করেছেন। অথচ উম্মতের বড় বড় মুফাসসিরগণ ‘সম্মান ও মর্যাদায়’ শ্রেষ্ঠ হওয়ার কথা বলেন। যেমন
আল্লামা ইবনে কাসীর রহ.
ﺍﻟﺮﺟﺎﻝ ﻗﻮﺍﻣﻮﻥ ﻋﻠﻰ ﺍﻟﻨﺴﺎﺀ
আয়াতের তাফসীর করতে গিয়ে বলেন,
ﺃﻱ ﺍﻟﺮﺟﻞ ﻗﻴﻢ ﻋﻠﻰ ﺍﻟﻤﺮﺃﺓ ﺃﻱ
ﻫﻮﺭﺋﻴﺴﻬﺎ ﻭﻛﺒﻴﺮﻫﺎ ﻭﺍﻟﻤﺤﺎﻛﻢ ﻋﻠﻴﻬﺎ ،ﻣﺆﺩﺑﻬﺎ ﺇﺫﺍ
ﺍﻋﻮﺟﺖ
অর্থ: স্ত্রীর কাছে স্বামীর অবস্থান শাসনকর্তা ও সরদারের ন্যায়। প্রয়োজনে স্বামী স্ত্রীকে উপযুক্ত
সংশোধনও করতে পারবেন।  আর
ﻭﻟﻠﺮﺟﺎﻝ ﻋﻠﻴﻬﻦ ﺩﺭﺟﺔ
এর তাফসীরে আল্লামা ইবনে কাসীর
রহঃ লিখেন-
ﻭﻟﻠﺮﺟﺎﻝ ﻋﻠﻴﻬﻦ ﺩﺭﺟﺔ ﺃﻱ ﻓﻲ ﺍﻟﻔﻀﻴﻠﺔ
ﻓﻲ ﺍﻟﺨﻠﻖ ﻭﺍﻟﻤﻨﺰﻟﺔ ﻭﻃﺎﻋﺔ ﺍﻷﻣﺮﻭﺍﻹﻧﻔﺎﻕ ﻭﺍﻟﻘﻴﺎﻡ ﺑﺎﻟﻤﺼﺎﻟﺢ ﻭﺍﻟﻔﻀﻞ ﻓﻲ ﺍﻟﺪﻧﻴﺎ ﻭﺍﻵﺧﺮﺓ
অর্থ:
স্বামী স্ত্রী থেকে সম্মান,মর্যাদা,অনুকরণ
ইত্যাদিতে এক স্তর উর্ধেﻟﺪ। (তাফসীরে ইবনে কাসীর-১/৬১০) এছাড়াও ডাক্তার সাহেবের এই তাফসীর রাসুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের
নিম্নের হাদিসটির সম্পুর্ণ বিপরীত,রাসুলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন-
ﻗَﺎﻝَ » ﻓَﻼَ ﺗَﻔْﻌَﻠُﻮﺍ ﻟَﻮْ ﻛُﻨْﺖُ ﺁﻣِﺮًﺍ ﺃَﺣَﺪًﺍ ﺃَﻥْ
ﻳَﺴْﺠُﺪَ ﻷَﺣَﺪٍ ﻷَﻣَﺮْﺕُ ﺍﻟﻨِّﺴَﺎﺀَ ﺃَﻥْ ﻳَﺴْﺠُﺪْﻥَ
ﻷَﺯْﻭَﺍﺟِﻬِﻦَّ ) ﺳﻨﻦ ﺍﺑﻰ ﺩﺍﻭﺩ ، ﺭﻗﻢ
ﺍﻟﺤﺪﻳﺚ 2142 - )
অর্থ: যদি আমি আল্লাহ তা‘য়ালা ছাড়া অন্য
কাউাকে সিজদা করার নির্দেশ দিতাম,তাহলে আমি মহিলাদেরকে আপন আপন স্বামীকে সিজদা করার আদেশ দিতাম। (আবু দাউদ, হাদীস নং-২১৪২)
যদি স্বামী-স্ত্রী উভয় জন সাম্মান ও মর্যদায়
সমান এবং স্বামীর মর্যাদা স্ত্রীর উর্ধোম না হতো, তাহলে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
স্ত্রীদেরকে সিজদা (যা সর্বোচ্চ সম্মানের প্রতীক) করার কেন আদেশ দেয়ার কথা বললেন?
দ্বিতীয় আয়াত ডাক্তার সাহেবের কাছে একটি প্রশ্ন
করা হয়েছিল ‘পবিত্র কুরআনে বলা হয়েছে যে মাতৃগর্ভে নবজাত শিশুর লিঙ্গ কেবল মাত্র আল্লাহ তা‘য়ালাই জানেন। কিন্তু এখন বিজ্ঞান অনেক
উন্নতি করেছে,আমরা আল্ট্রাসনুগ্রাফীর মাধ্যমে নবজাতকের লিঙ্গ নির্ধারণ করে থাকি।
কুরআনের এই আয়াত কি মেডিকেল সাইন্সের
বিপরীত নয়? এর উত্তর দিতে গিয়ে তিনি বলেন,‘এটি সত্য যে, কুরআনের এ আয়াতের বিভিন্ন অনুবাদ ও
ব্যাখ্যায় বলা হয়েছে যে,“কেবল আল্লাহ
তা‘য়ালাই জানেন মাতৃগর্ভে নবজাতকের
লিঙ্গের কথা”। কিন্তু এই আয়াতের বর্ণনা ভঙ্গির
প্রতি গভীর ভাবে পর্যবেক্ষণ করলে দেখা যায়,এখানে ইংরেজী শব্দ sexএর অর্থ প্রদানকারী কোন শব্দ নেই।
মূলতঃ কুরআন যা বলতে চায় তা এই যে,মাতৃগর্ভে কি আছে? তা আল্লাহ জানেন৷ বহু সংখ্যক মুফাসসিরগণ এখানে ভুলের শিকার হয়েছেন। তারা বলেছেন
‘মাতৃগর্ভে নবজাতকের লিঙ্গ আল্লাহই জানেন’। এটি অশুদ্ধ। এই  আয়াতটি নবজাতকের লিঙ্গের দিকে ইঙ্গিত করে না। বরং তা থেকে উদ্দেশ্য হল এই
নবজাতকের স্বভাব কেমন হবে,সে ছেলেটি মাতা-
পিতার জন্য রহমত হবে না অভিশাপ?
ইত্যাদি ।  (ইসলাম পর চালিস ইতিরাজাত-১৩০,
ডাঃ জাকির নায়েক, আরীব পাবলিশার্স,
দিল্লী) ডাক্তার সাহেব অধুনিক বিজ্ঞানের গবেষণায়
প্রভাবিত হয়ে এ কারণে সৃষ্টি একটি অভিযোগের উত্তর
দেয়ার জন্য কুরআনের অন্য আয়াত ও সাহাবী-
তাবেয়ী থেকে বর্ণিত তাফসীরকে পশ্চাপদ রেখে একটি সু-প্রশিদ্ধঅর্থকে অস্বীকার করে দিলেন। এবং বড় বড়
মুফাসসিরগণের উপর অভিযোগ করে তাদেরকে ভ্রান্তিতে নিক্ষেপ করলেন। ডাক্তার সাহেব যে ব্যাখ্যা করেছেন তা ﻣﺎ ﻣﻮﺻﻮﻟﻪ’-এর ব্যাপকতায় আসতে পারে। আনেক  মুফাসসিরগণ সম্ভাবনা হিসাবে প্রথম
অর্থের সাথে এটিকেও যোগ করেছেন। কিন্তু অন্য
অর্থকে বিলকুল অশুদ্ধ বলা,ডাক্তার
সাহেবের গবেষণায় ঘাটতি ও তাফসীরের
ক্ষেত্রে সাহাবা- তাবেয়ীদের মতামতকে অবমূল্যায়নের বড় প্রমাণ। কেননা ডাক্তার সাহেব যে অর্থকে অস্বীকার
করছেন তার প্রতি সুরায়ে রা‘দের আট নাম্বার আয়াত ইঙ্গিত করছে।
ﺍﻟﻠﻪ ﻳﻌﻠﻢ ﻣﺎ ﺗﺤﻤﻞ ﻛﻞ ﺃﻧﺜﻰ ﻭﻣﺎ
ﺗﻐﻴﺾ ﺍﻻﺭﺣﺎﻡ ﻭﻣﺎ ﺗﺰﺩﺍﺩ
অর্থ: আল্লাহ তা‘য়ালা সবকিছুর খবর
রাখেন;যা মাতৃগর্ভে থাকে তার,এবং যা কিছু
মায়ের পেটে কম-বেশী হয় তার। (সূরা রাদ-৮)
এবং প্রশিদ্ধ তা‘বেয়ী,তাফসীর শাস্ত্রের
ইমাম হযরত কাতাদাহ রহ. থেকেও এই অর্থই
বর্ণিত। যেমন তিনি বলেন,
ﻓﻼﺗﻌﻠﻢ ﻣﺎﻓﻲ ﺍﻻﺭﺣﺎﻡ ﺃﺫﻛﺮ ﺃﻡ ﺃﻧﺜﻲ
ﺍﻟﺦ
অর্থ: মাতৃগর্ভে ছেলে না মেয়ে তার বাস্তব জ্ঞান আল্লাহ তা‘য়ালা ব্যতীত অন্য কারো কাছে নেই। তেমনি আল্লামা ইবনে কাসীর রহ. তাফসীরে ইবনে কাসীরের ৬ষ্ঠ খন্ডের ৩৫৫ পৃষ্টায়, এবং আল্লামা নাসাফী রহ. তাফসীরে মাদারিকের তৃতীয় খন্ডের ১১৬ নং পৃষ্টায়, এবং আল্লামা শাওকানী রহ. তাফসীরে ফাতহুল কাদীরের পঞ্চম খন্ডের ৪৯৮ নং পৃষ্টায় উপরোক্ত আয়াতের এই অর্থই
বলেছেন। কিন্তু ডাক্তার সাহেব এই সকল শীর্ষ
মুফাসসিরগণের অর্থকে অশুদ্ধ বলে নিজের
পক্ষ থেকে বর্ণনাকৃত অর্থকেই একান্ত বিশুদ্ধ
মনে করে তার উপরই চুড়ান্ত সিদ্ধান্ত দিয়েছেন।
উল্লেখিত প্রশ্নের বিশুদ্ধ জবাব: আয়াতের উদ্দেশ্য আল্লাহ তা‘য়ালার জন্য ‘ইলমে গায়ব’ বা অদৃশ্যের জ্ঞান সাব্যস্ত করা। বস্তুত ‘ইলমে গায়ব’ বলা হয় ঐ দৃঢ় ও
নিশ্চিত জ্ঞানকে যা কোন বাহ্যিক উপকরণ ছাড়া,যন্ত্র ব্যতীত সরাসরি অর্জিত হয়।মেডিকেল সাইন্সের যন্ত্র
দ্বারা ডাক্তারদের অর্জিত জ্ঞান দৃঢ়-নিশ্চিত জ্ঞানও নয়
আবার উপকরণ ছাড়াও নয়;বরং তা একটি ধারণা প্রসূত জ্ঞান মাত্র;যা যন্ত্র দ্বারা অর্জিত হয়।
অতএব আল্ট্রাসোনুগ্রাফী দ্বারা অর্জিত এই
ধারণা প্রসূত জ্ঞান দ্বারা পবিত্র কুরআনের
আয়াতের উপর কোন ধরণের অভিযোগ
উত্থাপক করা যাবে না। তৃতীয় আয়াত:
ﻳَﺎ ﺃَﻳُّﻬَﺎ ﺍﻟﻨَّﺒِﻲُّ ﺇِﺫَﺍ ﺟَﺎﺀَﻙَ ﺍﻟْﻤُﺆْﻣِﻨَﺎﺕُ ﻳُﺒَﺎﻳِﻌْﻨَﻚَ
ﻋَﻠَﻰ ﺃَﻥْ ﻟَﺎ ﻳُﺸْﺮِﻛْﻦَ ﺑِﺎﻟﻠَّﻪِ ﺷَﻴْﺌًﺎ )ﺍﻟﻤﻤﺘﺤﻨﺔ 12 - )
অর্থ: হে নবী আপনার নিকট মু‘মিন
নারীরা এসে আনুগত্যের শপথ করে যে,
তারা আল্লাহ তা‘য়ালার সাথে অংশিদার
সাব্যস্ত করবে না। (সূরা মুমতাহিনা-১২)
ডাক্তার সাহেব এই আয়াতের তাফসীর
করতে গিয়ে বলেন,এখানে ‘বায়আত’ শব্দ
ব্যবহার করা হয়েছে। তাই ‘বায়আত’শব্দে আমাদের বর্তমান ইলেক্শনের অর্থও অন্তর্ভুক্ত। কেননা রাসুলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একদিকে আল্লাহ তা‘য়ালার রাসুল ছিলেন,অপরদিকে রাষ্ট্র প্রধানও ছিলেন। আর ‘বায়াআত’ দ্বারা উদ্দেশ্য ঐ রাষ্ট্র
প্রদানের আনুগত্ব করার নামই। এ হিসেবে ইসলাম
নারীদেরকে ভোটাধিকারও প্রদান করেছিল ।
(ডাঃ জাকির নায়েক প্রণীত “ইসলাম মে খাওয়াতিন কি হুকুক”-৫০) এখানে ডাক্তার সাহেব আয়াতের অপ-
ব্যাখ্যার মাধ্যমে মহিলাদের ভোটাধিকার প্রমাণ
করতে চাচ্ছেন;তিনি বলেন,মহিলারা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর দরবারে এসে ‘বায়আত’ গ্রহণ করা;মূলত বর্তমান গণতন্ত্রের নির্বাচন পদ্ধতির প্রাচীন পদ্ধতি। অথচ গণতন্ত্র সর্ম্পকে যারা অবগত তারা ভালভাবেই জানেন যে,ডাক্তার
সাহেবের এই ব্যাখ্যা সম্পূর্ণরূপে বাস্তবতা বিরোধী,এবং
তাফসীরের ক্ষেত্রে যুক্তির অপ-প্রয়োগ মাত্র।
কেননা বর্তমান গণতন্ত্রে রাষ্ট্র প্রধান নির্বাচন করার জন্য আপন আপন ভোটাধিকার প্রয়োগ করার অধিকার সকলের রয়েছে, যদি কোন ব্যক্তি সংখ্যাগরিষ্ট লোকের
ভোট না পায় তাহলে তিনি রাষ্ট্রপ্রধানহতে পারবেন না। যদি রাসূল সাঃ এর বায়আত নেয়ার মূলত ভোট নেয়া হতো, তাহলে কি সেসবসাহাবীয়াদের কি কোন অধিকার ছিল রাসূলসাঃ কে রাষ্র্রপ্রধান মানতে অস্বিকৃতি জানানো?
ঘাম,হায়েয নয়। তাই হায়েয হলে নামাযপড়বে না। আর হায়েয বন্ধ হয়ে গেলে রক্ত ধুয়ে নামায পড়বে। হিসাম বলেন,আমার পিতা বলেন,অতঃপর প্রত্যেক নামাযের জন্য অজু করবে,আর এই অজু ওয়াক্ত
বাকি থাকা পর্যন্ত অব্যহত থাকবে। ( সহীহ বুখারী, হাদীস নং-২২৬)
(২) ﻋﻦ ﺍﺑﻦ ﻋﺒﺎﺱ ﻗﺎﻝ : ﻗﺎﻝ ﺭﺳﻮﻝ ﺍﻟﻠﻪ
ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭ ﺳﻠﻢ : ﺇﺫﺍ ﺭﻋﻒ
ﺃﺣﺪﻛﻢ ﻓﻲ ﺻﻼﺗﻪ ﻓﻠﻴﻨﺼﺮﻑ ﻓﻠﻴﻐﺴﻞ ﻋﻨﻪ
ﺍﻟﺪﻡ ﺛﻢ ﻟﻴﻌﺪ ﻭﺿﻮﺀﻩ ﻭﻟﻴﺴﺘﻘﺒﻞ ﺻﻼﺗﻪ
অর্থ: হযরত ইবনে আব্বাস রাঃ থেকে বর্ণিত।
রাসূল সাঃ ইরশাদ করেছেন-তোমাদের কারো যদি নামাযে নাক থেকে রক্ত বের হয়, তাহলে নামায ছেড়ে দিয়ে তা ধৌত করবে, তারপর অযু করবে, তারপর নামায আদায় করবে। {আল মুজামুল কাবীর, হাদীস নং-১১৩৭৪, সুনানে দারা কুতনী, হাদীস নং-১৭,
মুসান্নাফে আব্দুর রাজ্জাক, হাদীস নং-৩৬১৮}
(৩) ﻗﺎﻝ ﺗﻤﻴﻢ ﺍﻟﺪﺍﺭﻱ ﻗﺎﻝ ﺭﺳﻮﻝ ﺍﻟﻠﻪ
ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭ ﺳﻠﻢ : ﺍﻟﻮﺿﻮﺀ ﻣﻦ ﻛﻞ ﺩﻡ
ﺳﺎﺋﻞ
অর্থ: হযরত তামিমে দারী রাঃ বলেন-রাসূল
সাঃ বলেছেন-প্রবাহিত রক্তের কারণে অযু
আবশ্যক। {সুনানে দারেমী, হাদীস নং-২৭,
নসবুর রায়াহ-১/৩৭, মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা,
হাদীস নং-১৭৪২) এছাড়া আরো অনেক হাদিস থাকা সত্বেও ডাক্তার সাহেব আপন অজ্ঞতাকে গোপন
করে মুজতাহিদ সেজে বলে দিলেন,‘রক্ত দ্বারা অজু ভাঙ্গার ব্যাপারে কোন দলিল নেই’! 
    (গ) নারী-পুরুষের নামাযে পার্থক্য অবৈধ ?!
অন্য এক জায়গায় ডাঃ জাকির নায়ক সাহেব
নারী-পুরুষের নামাযে পার্থক্য প্রসঙ্গে বলেন, ‘‘কোথাও একটি সনদবিশিষ্ট বিশুদ্ধ হাদিস পাওয়া যায়
না যেখানে নারীদেরকে পুরুষ থেকে পৃথক
পদ্ধতিতে নামায আদায় করার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। এর বিপরীতে বুখারী শরিফে বর্ণিত যে,হযরত উম্মে দারদা রা. বলেন,আত্তাহিয়্যাতের বৈঠকে মহিলারা পুরুষের ন্যায় বসার হুকুম”। এখানে ডাক্তার সাহেব সরাসরি দুইটি ভুল করেছেন: (ক) নারী-পুরুষের নামাযের পার্থক্যের ব্যাপারে কোন হাদীস নেই।
(খ) হুজুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
মহিলাদেরকে পুরুষের ন্যায় বসতে বলেছেন।
ডাক্তার সাহেব প্রথম কথা বলে ঐ সকল
হাদিস অস্বীকার করে বসলেন যার মধ্যে নারী-
পুরুষের নামাযে পার্থক্যের কথা রয়েছে। নিম্নে তার
কিছু বর্ণনা উল্লেখ করা হল
১- ﺃﺧﺮﺝ ﺍﻟﺒﺨﺎﺭﻱ ﻋﻦ ﺍﻟﻨﺒﻲ – ﻋﻠﻴﻪ ﺍﻟﺴﻼﻡ-
ﺃﻧﻪ ﻗﺎﻝ : ﻳﺎ ﺃﻳﻬﺎ ﺍﻟﻨﺎﺱ ﻣﺎ ﻟﻜﻢ ﺣﻴﻦ
ﻧﺎﺑﻜﻢ ﺷﻲﺀ ﻓﻲ ﺍﻟﺼﻼﺓ ﺃﺧﺬﺗﻢ ﻓﻲ ﺍﻟﺘﺼﻔﻴﻖ
ﺇﻧﻤﺎ ﺍﻟﺘﺼﻔﻴﻖ ﻟﻠﻨﺴﺎﺀ
অর্থ: রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ
করেন,হে লোক সকল! তোমাদের কি হল? নামাযে কোন অসুবিধা দেখলে করতালি দাও; করতালি তো একমাত্র মহিলাদের জন্যই। {সহীহ বুখারী-১/১৭৪, হাদীস নং-১১৭৭}
২- ﻋﻦ ﻭﺍﺋﻞ ﺑﻦ ﺣﺠﺮ ﻗﺎﻝ ﻟﻲ ﺭﺳﻮﻝ ﺍﻟﻠﻪ
ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭ ﺳﻠﻢ : ﻳﺎ ﻭﺍﺋﻞ ﺑﻦ
ﺣﺠﺮ ﺇﺫﺍ ﺻﻠﻴﺖ ﻓﺎﺟﻌﻞ ﻳﺪﻳﻚ ﺣﺬﺍﺀ ﺃﺫﻧﻴﻚ
ﻭﺍﻟﻤﺮﺃﺓ ﺗﺠﻌﻞ ﻳﺪﻳﻬﺎ ﺣﺬﺍﺀ ﺛﺪﻳﻴﻬﺎ
অর্থ: হযরত ওয়ায়েল ইবনে হাজার
রাঃ থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন,রাসুলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামআমাকে বলেছেন,হে ওয়ায়েল! নামায পড়ার সময় হাত কান পর্যন্ত উঠাও আর মহিলারা সিনা পর্যন্ত উঠাবে। (আল মু’জামুল
কাবীর লিত তাবরানী, হাদীস নং-২৮, কানযুল
উম্মাল ফি সুনানিল আকওয়াল ওয়াল আফআল,
হাদীস নং-১৯৬৪০ )
৩- ﻋﻦ ﻳﺰﻳﺪ ﺑﻦ ﺃﺑﻲ ﺣﺒﻴﺐ : ﺃﻥ ﺭﺳﻮﻝ ﺍﻟﻠﻪ
ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭ ﺳﻠﻢ ﻣﺮ ﻋﻠﻰ ﺍﻣﺮﺃﺗﻴﻦ
ﺗﺼﻠﻴﺎﻥ ﻓﻘﺎﻝ ﺇﺫﺍ ﺳﺠﺪﺗﻤﺎ ﻓﻀﻤﺎ ﺑﻌﺾ
ﺍﻟﻠﺤﻢ ﺇﻟﻰ ﺍﻷﺭﺽ ﻓﺈﻥ ﺍﻟﻤﺮﺃﺓ ﻟﻴﺴﺖ
ﻓﻲ ﺫﻟﻚ ﻛﺎﻟﺮﺟﻞ
অর্থ: হযরত ইয়াযিদ ইবনে আবি হাবীব রাঃ থেকে বর্ণিত,রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নামাযরত দুই মহিলার পাশ দিয়ে গমন করছিলেন, তখন (তাদেরকে উদ্দেশ্য করে) রাসুলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,যখন
তোমরা সিজদা দাও, তখন শরীরের কিছু অংশ মাটির সাথে মিলিয়ে দাও। কেননা,এই ক্ষেত্রে মহিলারা পুরুষের মত নয়। (সুনানে বায়হাকী কুবরা, হাদীস নং-৩০১৬, সুনানে আবু দাউদ মুরসালান)
৪- ﻋﻦ ﺍﺑﻦ ﻋﻤﺮ ﺃﻧﻪ ﺳﺌﻞ ﻛﻴﻒ ﻛﻦ ﺍﻟﻨﺴﺎﺀ
ﻳﺼﻠﻴﻦ ﻋﻠﻰ ﻋﻬﺪ ﺭﺳﻮﻝ ﺍﻟﻠﻪ ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ
ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ ﻗﺎﻝ : ﻛﻦ ﻳﺘﺮﺑﻌﻦ ﺛﻢ ﺃﻣﺮﻥ
ﺃﻥ ﻳﺤﺘﻔﺰﻥ
অর্থ: হযরত ইবনে উমর রা. থেকে জিজ্ঞাসা করা হল,রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের
যুগে মহিলারা কিভাবে নামায পড়তেন? তিনি বলেন,তারা চারজানু হয়ে বসতেন,পরে তাদের জড়সড় হয়ে নামায আদায়ের আদেশ দেয়া হয়। (জামিউল
মাসানিদ-১/৪০০) এ সকল বর্ণনায় নারী-পুরুষের
নামাযে বিভিন্ন ধরণের পার্থক্যের কথা উল্লেখ করা হয়েছে।এ ছাড়াও আরো অনেক হাদিস রয়েছে,এবিষয়ে রচিত কিতাবাদীতে বিস্তারিত দেখা যেতে পারে। আর দ্বিতীয় বিষয় অর্থাৎ
বুখারী শরিফে মহিলাদেরকে পুরুষের ন্যায়
নামায আদায় করার হুকুম সংশ্লিষ্ট
বিষয়টি একটি ভুল নিসবত ইমাম বুখারীর দিকে। ডাক্তার সাহেব হযরত উম্মে দারদা এর যে হাদিসটির
উদ্ধৃতি দিয়েছেন তা এভাবে বর্ণিত-
ﻭﻛﺎﻧﺖ ﺃﻡ ﺍﻟﺪﺭﺩﺍﺀ ﺗﺠﻠﺲ ﻓﻲ ﺻﻼﺗﻬﺎ
               ﺟﻠﺴﺔ ﺍﻟﺮﺟﻞ ﻭﻛﺎﻧﺖ ﻓﻘﻴﻬﺔ
অর্থ: উম্মে দারদা নামাযে পুরুষের ন্যায়
বসতেন,আর তিনি ‘ফকীহা’ ছিলেন। {সহীহ
বুখারী-১/১১৪} এখানে কোথাও রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লামের বাণী বা আমলের কথা উল্লেখ নেই; বরং এটি এক মহিলা তাবেয়ীর আমলমাত্র। যা উল্লেখ করে ইমাম বুখারী রহঃ ইঙ্গিতও করেছেন
যে,তিনি ফকীহা ছিলেন,তিনি স্বীয় ইজতিহাদের
ভিত্তিতে এমন করতেন।

         এই ফিতনা থেকে নিজে বাচুন ও অন্যকে বাচান ৷ 

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ