আ'লা হযরত ইমাম আহমদ রেযা খাঁন
ফাজেলে বেরলবী রহমাতুল্লাহি তায়ালা
আলাইহি এর সংক্ষিপ্ত জীবনী ও
পরিচিতি।
----------------------------------------
# জন্ম_ও_বংশ_পরিচয় :
ইসলাম ও মুসলমানদের এ দুর্যোগপূর্ণ মুহূর্তে
সিপাহী বিপ্লবের এক বছর পূর্বে ১৮৫৬
সালের ১৮ জুন, ১২৭২ হিজরির ১০ শাওয়াল
শনিবার ভারতের উত্তর প্রদেশের বেরলবী
শহরে সওদাগ নামক মহল্লায় স্বনামধন্য খান
পরিবারে ইমাম আহমদ রেযা
(রহমাতুল্লাহি আলাইহি রাহমাহ) জন্ম
গ্রহণ করেন। তার পূর্ব পুরুষগণ কাবুলের
কান্দাহার প্রদেশের অধিবাসী ছিলেন।
হযরত মাওলানা সাঈদ উল্লাহ খান
(রাহমাতুল্লাহি আলাইহি রাহমাহ) ছিলেন
কান্দাহারের এক যুগশ্রেষ্ট আলিম ও বযুর্গ
ব্যক্তি। তিনি ছিলেন এক সম্ভ্রান্ত পাঠান
গোত্রের বংশধর। মোঘল আমলে তিনি
সুলতান মাহমুদ শাহ এবং নাসির শাহ এর
সঙ্গে লাহোর আগমন করেন। সেখানে তিনি
পরপর কয়েকটি সরকারী উচ্চপদে অধিষ্ঠিত
ছিলেন। লাহোরের শীষমহল তারই জায়গীর
ছিল। পরবর্তীতে তিনি লাহোর থেকে
দিল্লিতে চলে এলে সেখানেও সরকারী
গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করেন। তার ছেলে
সা'আদত ইয়ার খান মোঘল সম্রাজের এক
দিগ্বিজয়ী সেনাপতি ছিলেন। তারই এক
ছেলে আযম খান ভারতের উত্তর প্রদেশ
বেরলিতে চলে আসেন। কিছুদিন সরকারী
দায়িত্ব পালনের পর তিনি দুনিয়া বিমূখ
হয়ে অধ্যান্তিক সাধনায় মগ্ন হয়ে পড়েন।
এবং বেরলিতে স্হায়ীভাবে বসবাসের
সিদ্ধান্ত নেন। তার পুত্র হাফেয কাযেম
আলি খান ছিলেন একজন বিশিষ্ট জমিদার।
আটটি পরগণার জায়গীর তারই হাতে ছিল।
তারই পুত্র রেযা আলী খান ছিলেন
তত্কালীন যুগের একজন বিশিষ্ট আলেম
দ্বীন ও বুজুর্গ ব্যক্তিত্ব। যিনি জেনারেল
বখত খানের সাথে ১২৫০ হিজরিতে (১৮৩৪)
ইংরেজ সরকারের বিরুদ্বে যুদ্বে অবতীর্ হন।
এ বুযুর্গ মুজাহিদ রেযা আলী খানের পুত্র
হলেন আল্লামা নক্বী আলী যিনি ওই যুগের
একজন স্বনামধন্য পন্ড়িত, দার্শনিক,ফকীহ ও
উচ্চ মর্যাদাসম্পন্ন বুযুর্গ ব্যক্তিত্ব ছিলেন।
আর ইমাম আহমদ রেযা খান
(রাহমাতুল্লাহি আলাইহি রাহমাহ) ছিলেন
তারই সন্তান। এভাবে তার পূর্ব পুরুষদের
প্রত্যেকেই স্বস্ব যুগে জ্ঞান ও আমলের
মূর্তপ্রতীক ছিলেন.।
# নামঃ
ইমাম আহমদ রেযা খান (রাহমাতুল্লাহি
আলাইহি রাহমাহ) র জন্মের পর তার নাম
মুহাম্মদ রাখা হয়। সংখ্যাতাত্তিক
(আবজাদী) নাম আল মুখতার (১২৭২ হি)।
কিন্তু তার সম্মানিত পিতামহ মাওলানা
রেযা আলী খান আহমদ রেযা নামে তার
নাম নির্বাচন করেন।
# স্মৃতিশক্তিঃ
ইমাম আহমদ রেযা (রাহমাতুল্লাহি
আলাইহি রাহমাহ) র স্মরণশক্তি ছিল
বিস্ময়কর। চার বছর বয়সে পবিত্র কোরআন
দেখে পাঠ সমাপ্ত করেন। মকতবে প্রথম
পাঠের দিনের ঘটনা থেকেই তার এ
অসাধারণ মেধাশক্তির প্রমাণ পাওয়া
যায়। এ অসাধারণ মেধা ও বিস্ময়কর
স্মরণশক্তির কারনে অতি স্বল্প বয়সে
অর্থাত্ মাত্র ১৪ বছর বয়সে তিনি
প্রাতিষ্টা শিক্ষার শেষ বর্ষের সনদ অর্জন
করেন। শিক্ষা সমাপ্তির পরপরই তার
সম্মানিত পিতা নক্বী আলী খান
(রাহমাতুল্লাহি আলাইহি রাহমাহ)
ফতোয়া দানের দায়িত্ব তাকে অর্পন করেন
এবং অল্প বয়সেই তিনি ফতোয়া লিখার
কাজ আরম্ব করেন।
# বায়াতগ্রহণঃ
ইমাম আহমদ রেযা রাহমাতুল্লাহি
আলাইহি রাহমাহ হিজরী ১২৯৪ মুতাবেক
১৮৭৭ সালে পিতামহ সমেত তত্কালীন যুগের
প্রসিদ্ব আধ্যান্তিক সাধক হযরত শাহ আলে
রসূল মারহারভী (রাহমাতুল্লাহি আলাইহি
রাহমাহ) র খিদমতে হাজির হন এবং
ক্বাদেরীয়া ত্বরীকায় বায়আতের সৌভাগ্য
অর্জন করেন, সাথে সাথে খিলাপত ও
ইজাযত লাভেও ধন্য হন। তিনি আধ্যান্তিক
ক্ষেত্রে এত উন্নতি লাভ করেছিলেন যে,
অনেক পীর মাশায়েক তাকে খিলাফত
প্রদানে ধন্য করেন। প্রায় তেরটির মত
তরিকতের সিলসিলায় তার খিলাফত
অর্জনের সৌভাগ্য হয়।
# সংস্কারকঃ
১৮৭৮ (১২৯৫ হি) সালে পিতার সাথে প্রথম
বার হজ্ব পালনোপলক্ষে পবিত্র মক্কায় গমন
করেন। মক্কার প্রসিদ্ব আলিমদের কাছ
থেকে কুরআন, হাদিস ও ফিকহ ইত্যাদির সনদ
অর্জন করেন। ১৯০৫ (১৩২৩হি) সালে দ্বিতীয়
বার হজ্বে গমন করেন। এ সময় পবিত্র মক্কা
ও মদিনায় অবস্হানকালে তাকে
সেখানকার উলামাবৃন্দ প্রাণঢালা সম্মান
প্রদর্শন করেন। অনেকে তার কাছ থেকে
কুরআন.হাদিস ও ফিকহ প্রভৃতির সনদ অর্জন
করেন। এ সময়ে হিজাযের সম্মানিত
উলামাবৃন্দ তার নিকট প্রিয়নবীর ইলমে
গায়ব (অদৃশ্যজ্ঞানের ধারক হওয়া) এবং
কাগজী নোট সম্পর্কে ফতোয়া তলব করেন।
তাদের জিজ্ঞাসিত ফতোয়ার জবাবে "আদ-
দাওলাতুল মাক্কিয়্যাহ" এবং "কিফলুল
ফাক্বীহিল ফাহিম" নামে আরবী ভাষায়
দুটি গ্রন্হ রচনা করেন। আরববাসী উলামা
গ্রন্হে তার জ্ঞানগত ও ভাষাগত গভীরতা
দেখে হতভম্ব হয়ে পডেন। ১৮৮০ সালে
অনুষ্ঠিত অল ইন্ড়িয়া উলামা কনফারেন্সের
মাধ্যমে ভারতবর্ষের বড় বড় আলেমগণ তাকে
হিজরি চতুর্দশ শতাব্দির মুজাদ্দিদ
(সংস্কারক) হিসেবে স্বীকার করে নেন।
ইমাম আহমদ রেযা (রাহমাতুল্লাহি
আলাইহি রাহমাহ) ছিলেন ঊনবিংশ
শতাব্দীর জ্ঞান-গবেষণার জগতে একজন
অনন্য শ্রেষ্ট ও সফলতম ব্যক্তিত্ব। জ্ঞান-
রাজ্যের প্রায় পঞ্চাশের অধিক বিষয়ে

0 মন্তব্যসমূহ