আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাআত এর পরিচয়
রাসূল (সাঃ) ইরশাদ করেছেন- নিশ্চয় বনী ইসরাঈল ছিল ৭২ দলে বিভক্ত। আর আমার উম্মত হবে ৭৩ দলে বিভক্ত। এই সব দলই হবে জাহান্নামী একটি দল ছাড়া। সাহাবাজণ জিজ্ঞেস করলেন-সেই দলটি কারা? নবীজী (সাঃ) বললেন- যে দলটিতে আমি ও আমার সাহাবাগণ থাকব। (যে দলটি আমাকে ও আমার সাহাবায়ে কেরামগণকে অনুসরণ করবে তারা জান্নাতী দল ){সুনানে তিরমিযী, হাদীস নং-২৬৪১, আল মু’জামুল কাবীর, হাদীস নং-৭৬৫৯}
হযরত গাউসে পাক আব্দুল কাদের জিলানী (রহঃ) উনার “গুনিয়াতুত ত্বালেবীন” কিতাব এ বলেন, ৭৩ ফেরকা মুলতঃ মুল দশটি ফেরকার শাখা প্রশাখা। সেই দশটি ফেরকা হইলঃ
(১) আহলে সুন্নাত, (২)খারেজী (৩)শিয়া বা রাফেজী, (৪)মোতায়েলা , (৫) মারযিয়া, (৬) মুশাব্বাহা, (৭)জাহমিয়া, (৮) জারারিয়া, (৯) নাজ্জারিয়া, (১০)কালাবিয়াহ।
আহলে সুন্নাত বা সুন্নি জামাতের কোন শাখা প্রশাখা নাই। ৪টি মাযহাব কোনো দল নয় বরং এটা ফিকাহ একেকটা ফিকাহ এর স্কুলের মত। তাদের সবার আকীদা একই। কিন্তু অপরাপর ৯টি দলেরই শাখা প্রশাখা বর্তমান এবং তারা ভিন্ন আকীদায় বিশ্বাসী।
হযরত গাউস পাক আব্দুল কাদের জিলানী রঃ বলেন খারেজী দলের শাখা ১৪টি, শিয়া বা রাফেজী ৩৩টি, মোতাযেলার ৬টি, মারজিয়ার ১২টি, মুশাব্বাহার ৩টি, জারারিয়া, কালাবিয়াহ, নাজ্জারিয়া, জাহমিয়ার একটি করে মোট ৭৩ টি ফেরকা ।
আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাআত যে হক্ব দল তা চেনার উপায়- আহলে সুন্নাতের সাথে ৭২ দলের যে বিভক্তি তা মূলত আক্বীদাগত ও অন্যান্য পার্থক্য ।
সবচেয়ে জরূরী বিষয় হল আহলে সুন্নাতের বিপক্ষে ৭২ ফেরকা এক এবং আক্বীদাগতভাবেও তারা এক। যা আহলে সুন্নাত ও ৭২ ফেরকার স্পষ্ট ব্যবধান করে দেয় কারণ আহলে সুন্নাহর সকল আক্বীদা কোরআন ও সুন্নাহ ভিত্তিক এবং বাকী ৭২ ফেরকা হতে আলাদা । নিম্নে আহলে সুন্নাহ বনাম ৭২ দল আক্বীদাগত পার্থক্য দেখানো হল।
(১) আমরা আহলে সুন্নাত নামাজ পড়ি, রোজা রাখি, হজ্ব করি, যাকাত দিই , সুন্নাত নফলকে গুরুত্ব দিই, যথাসম্ভব পালন করার চেষ্টা করি। কিন্তু বাকী ৭২ ফেরকার মতে শুধু ফরজ জরুরী , সুন্নাত নফলে গুরুত্ব নাই।
(২) আহলে সুন্নাহর মতে নবীজি মানুষ, কিন্ত আল্লাহর বিশেষ ও অতুলনীয় সৃষ্টি। কিন্তু বাকী ৭২ ফেরকা একমত যে রাসূল সোঃ) তাদের মত সাধারণ মানুষ। নাউযুবিল্লাহ
(৩) আহলে সুন্নাহর মতে রাসূল (সাঃ) আদম (আঃ) এর সৃষ্টির আগে থেকে নবী ছিলেন, কিন্তু বাকী ৭২ ফেরকা একমত রাসূল (সাঃ) গোমরাহ ছিলেন দুনিয়াতে ৪০ বছর বয়সে নবুয়ত পেয়ে নবী হয়েছেন ।
অথচ হাদিসে এসেছে -“ হুযূর পাক (সাঃ) ইরশাদ করেছেন, আমি তখনো নবী ছিলাম যখন হযরত আদম (আঃ) সালাম রূহ ও শরীরের মধ্যে ছিলেন।” (তিনার সৃষ্টির আগে মহাম্মদ (সাঃ) নবী ছিলেন)
( কানযুল উম্মাল, দাইলামী, ত্ববরানী, আবু নঈম, মিশকাত, মিরকাত ১১/৫৮)
এছাড়া অন্য হাদিসে নবী(সাঃ) বলেন ( ﻛﻨﺖ ﻧﺒﻴﺎ ﻭﺍﺩﻡ ﺑﻴﻦ ﺍﻟـﻤﺎﺀ ﻭﺍﻟﻄﻴﻦ)
আমি তখনো নবী ছিলাম, যখন হযরত আদম আলাইহিস সালাম তিনি পানি ও মাটিতে ছিলেন। (মিশকাত শরীফ , মিরকাত ১১/৫৮)
(৪) আহলে সুন্নাহ সকল অলী ওবুজুর্গদের খুবই শ্রদ্ধা করে তাদের কারামত বিশ্বাস করে ও স্বীকার করে। কিন্তু বাকী ৭২ দল অলীগণের কারামত বিশ্বাস করে না উল্টো তাদেরকে হেয় প্রতিপন্ন করে। অথচ আল্লাহ তাআলা হাদিসে কুদসীতে এরশাদ করেছেন -
হযরত আবু হুরায়রা (রঃ) হতে বর্ণিত ,
রাসুলে পাক (সাঃ) এরশাদ করেছেন, নিশ্চয়ই আল্লাহ তাআলা এরশাদ করেছেন, যে আমার অলীর সাথে শত্রুতা পোষণ করবে আমি তার বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করলাম ।
(সহিহ বুখারী)
আমার বান্দাহ আমার নির্ধারিত ফরজ কাজের মাধ্যমে, যা আমার নিকট প্রিয় তার মাধ্যমে এবং নফল কাজের মাধ্যমে আমার নৈকট্য লাভ করতে থাকে। এক পর্যায়ে এসে আমি নিজেই তাকে মুহাব্বত করি । আর যখন আমি তাকে মুহাব্বত করি , তখন তার মুখ আমার মুখ আমার মুখ হয়ে যায় যা দ্বারা সে কথা বলে । তার কান আমার কান হয়ে যায় , যা দ্বারা সে শুনে । তার চক্ষু আমার চক্ষু হয়ে যায় , যা দ্বারা সে দেখে । তার হাত আমার হাত হয়ে যায় , যার দ্বারা সে ধরে । তার পা আমার কুদরতি শক্তিতে রূপান্তরিত হয়, যা দ্বারা সে চলাফেরা করে । সে যদি আমার কাছে কিছু প্রার্থনা করে আমি তা অবশ্যই প্রদান করি ।
(বুখারী শরীফ ,২/৯৬৩ ,হাদিস নং ৬২৫৪) (আল্লাহর ইচ্ছাতে তারা কাজ করে কারণ তারা আল্লাহর খাস বান্দায় রুপান্তরিত হয়)
(৫) আহলে সুন্নাত অসিলার মাধ্যমে দোয়া করা জায়েজ মনে করে। কিন্তু বাকী ৭২ দলের মতে অসিলা শিরক। অথচ আল্লাহ তাআলা এরশাদ করেছেন
(ﻳَﺎ ﺃَﻳُّﻬَﺎ ﺍﻟَّﺬِﻳﻦَ ﺁَﻣَﻨُﻮﺍ ﺍﺗَّﻘُﻮﺍ ﺍﻟﻠَّﻪَ ﻭَﺍﺑْﺘَﻐُﻮﺍ ﺇِﻟَﻴْﻪِ ﺍﻟْﻮَﺳِﻴﻠَﺔَ ﻭَﺟَﺎﻫِﺪُﻭﺍ ﻓِﻲ ﺳَﺒِﻴﻠِﻪِ ﻟَﻌَﻠَّﻜُﻢْ ﺗُﻔْﻠِﺤُﻮﻥَ)
"হে মুমিনগণ! আল্লাহকে ভয় কর এবং তার নিকট অসিলা তালাশ কর এবং সর্বশক্তি দিয়ে তার পথে সংগ্রাম কর যেন তোমরা সফলকাম হতে পার।"
(সুরা আল মায়েদা:৩৫)
(৬) আহলে সুন্নাহ পবিত্র ঈদে মিলাদুন্নবী (সাঃ) উতযাপন করে। কিন্তু বাকী ৭২ দল এর মতে রাসূল (সাঃ) এর জন্মদিন -উদযাপন করার কোন অস্থিত্ ইসলামে নাই এবং তা বিদাত। অথচ এটা ইসলামী শরিয়তে জায়েজ । হাদিসে পাকে এসেছ -মিলাদ পালন করেছেন নবীজি (সাঃ) নিজেই -
হযরত আবু কাতাদা (রা হতে বর্নিত রাসুলে পাক (সাঃ) এর দরবারে আরজ করা হলো তিনি প্রতি সোমবার রোজা রাখেন কেন? উত্তরে নবীজি (সাঃ) ইরশাদ করেন, এই দিনে আমি জম্মন গ্রহন করেছি, এই দিনেই আমি প্রেরিত হয়েছি এবং এই দিনেই আমার উপর পবিত্র কুরআন নাযিল হয় ।
(সহীহ মুসলিম শরীফ ২য় খন্ড, ৮১৯ পৃষ্ঠা, বায়হাকী: আহসানুল কুবরা, ৪র্থ খন্ড ২৮৬ পৃ: মুসনাদে আহমদ ইবনে হাম্বল ৫ম খন্ড ২৯৭ পৃ:)
হযরত ইবনে আব্বাস (রাঃ) হইতে
বর্ণিত, একদিন হযরত আব্বাস রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু কিছু লোক নিয়ে নিজ গৃহে নবী পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর জন্মকালীন ঘটনাবলী বর্ণনা করছিলেন এবং তাঁর প্রশংসাবলী আলোচনা করে দুরুদ ও সালাম পেশ করছিলেন। ইত্যবসরে প্রিয়নবী হাজির হয়ে এ আবস্তা দেখে বললেন, তোমাদের জন্য আমার শাফায়াত আবশ্যক হয়ে গেল ।
( ইবনে দাহইয়ার আত-তানবীর )
সুতরাং প্রমানিত হল, মিলাদুন্নবী (সাঃ) উদযাপন দ্বারা রাসূলে পাকের শাফায়াত নসীব হয় ।
(৭) আহলে সুন্নাহর মতে ররাসূল (সাঃ) হায়াতুন্নবী তিনি নিতি ইন্তেকালের পর পবিত্র কবরে এখন জীবিত । কিন্তু ৭২ ফেরকার মতে তিনি মৃত। নাউযুবিল্লাহ। অথচ সহিহ হাদিস দ্বারা তা প্রমাণিত। যেমন এরশাদ হয়েছে - হযরত আনাস রঃ হতে বর্ণিত
নবী করীম দঃ এরশাদ করেছেন, নবীগণ তাদের নিজ নিজ কবরে জীবিত, সেখানে তারা নামাজ আদায় করেন। (বায়হাকি) অত্র হাদিসখানা সহিহ ।
এ ছাড়া ওই ৭২ ফিরকার মধ্যে অনেক খারাপ আকিদা হয়েছে । উধাহরণ সরূপ কএকটি তুলে ধরা হল ।
লেখেছেন
[মুহম্মদ হানিফ]


0 মন্তব্যসমূহ