Header Ads Widget

Responsive Advertisement

মসজিদ আলোকিত করার হুকুম


মসজিদ আলোকিত করার হুকুম

বিভিন্ন ধর্মীয় অনুষ্ঠানে, বিশেষ করে রমজান মাস, লায়লাতুল কদর উপলক্ষে কুরআন খতম কিংবা ঈদে মীলাদুন্নবী (দ:)-তে মসজিদগুলো উজ্জ্বল রাখা তথা আলোকসজ্জা করা একটি বড় এবাদত। এ সম্পর্কে অনেক প্রামাণ্য দলিল বিদ্যমান, যেগুলো এখানে আলোকপাত করা হলো।
সর্বশক্তিমান আল্লাহতা’লা এরশাদ ফরমান: “আল্লাহর মসজিদসমূহ তারাই আবাদ করে, যারা আল্লাহ ও কিয়ামতের প্রতি ঈমান আনে, নামায কায়েম রাখে, যাকাত প্রদান করে এবং আল্লাহ ভিন্ন অন্য কাউকেও ভয় করে না; সুতরাং এটাই সন্নিকটে যে এসব মানুষ সৎপথ প্রাপ্তদের অন্তর্ভুক্ত হবে।” [আল-কুরআন, ৯:১৮; তাফসীরে নূরুল এরফান বাংলা সংস্করণ]
মুফাসসিরীনে কুরআন (ব্যাখ্যাকারীবৃন্দ) বিবৃত করেন যে মসজিদে (জামাআতে) সালাত আদায়, তা পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখা, উন্নতমানের ম্যাট বিছানো, আলোকসজ্জা করা ইত্যাদি কার্যক্রম মসজিদের উন্নয়নে সহায়ক। হযরত সোলা্য়মান (আ:) ‘কিবরীত-এ-আহমার’ (এক ধরনের দাহ্য পদার্থ) দ্বারা মসজিদে বায়তুল মোকাদ্দাস আলোকিত করে রাখতেন। এর এমনই উজ্জ্বলতা ছিল যে বহু দূরে অবস্থিত মহিলাবর্গ তাদের সুতো কাটতে পারতেন! [তাফসীরে রূহুল বয়ান]
হযরত আবূ সাঈদ খুদরী (রা:) বলেন: “সাহাবী হযরত তামীম দারী (রা:)-ই ছিলেন সর্বপ্রথম ব্যক্তি, যিনি মসজিদগুলোতে চেরাগ জ্বালান।” [সুনানে ইবনে মাজাহ]
উম্মুল মো’মেনীন সাইয়্যেদাহ মায়মুনাহ (রা:) মহানবী (দ:)-কে জিজ্ঞেস করেন: “বায়তুল মোকাদ্দাস মসজিদ সম্পর্কে আমাদের নির্দেশ দিন।” তিনি উত্তরে বলেন, “সেখানে যেয়ে সালাত আদায় করো।” ওই সময় সেখানে একটি যুদ্ধ চলছিল। এই কারণে মহানবী (দ:) বলেন, “তোমরা যদি মসজিদে পৌঁছুতে না পারো এবং নামায পড়তে না পারো, তবে সেখানে তেল প্রেরণ করো, যাতে তা মসজিদের প্রদীপ জ্বালাতে ব্যবহৃত হয়।” [সুনানে আবি দাউদ]
ওপরের এই রেওয়ায়াত থেকে চারটি বিষয় উপলুব্ধ হয়:
১/ বায়তুল মোকাদ্দাস মসজিদে সালাত আদায়ের জন্যে ভ্রমণ করা স্বয়ং একটি সুন্নাত। সাইয়্যেদুনা রাসূলুল্লাহ (দ:) মে’রাজ রাতে অন্যান্য সকল পয়গম্বর (আ:)-এর ইমাম হয়ে সেখানে নামায পড়িয়েছিলেন। এই কারণেই তিনি সেখানে ভ্রমণ করে গিয়েছিলেন।
২/ মসজিদে বায়তুল মোকাদ্দাসে অনেক প্রদীপ জ্বালানো হতো; এ কথা হাদীসটিতে ব্যবহৃত ‘ক্কানাদীল’ শব্দটি থেকে বোঝা যায়।
৩/ মসজিদটিকে আলোকিত করাটা সেখানে নামায পড়ার সওয়াবের সাথে তুলনীয়। আরেক কথায়, এটি এক মহা সওয়াবদায়ক এবাদত।
৪/ মসজিদ আলোকিত করার জন্যে দূর-দূরান্ত থেকে তেল প্রেরণ করা সাহাবা (রা:)-বৃন্দের সুন্নাত।
মোহাদ্দীস ইবনে শাহীন উদ্ধৃত করেন হযরত আবূ এসহাক হামদানী (রা:)-কে, যিনি বলেন: প্রতি রমযান মাসের প্রথম রাতে খলীফা আলী (ক:) মসজিদে নববীতে প্রবেশ করতেন। ওতে হারিকেন/প্রদীপ জ্বলতো এবং কুরআন তেলাওয়াত করা হতো। তিনি সম্ভাষণ জানাতেন, “হে উমর ইবনে খাত্তাব (রা:)! আল্লাহ আপনার মাযার আলোকিত করুন, যেমনটি আপনি মসজিদকে আলোকিত করেছেন কুরআন তেলাওয়াতের সময়।” [ইবনে শাহীন]
এতে প্রমাণিত হয় যে রমযান মাসে মসজিদ আলোকিত করার প্রথা খলীফা উমর (রা:)-এর শাসনামল হতেই অনুশীলিত হয়ে এসেছিল। আরো লক্ষণীয় যে অন্যান্য সাহাবী (রা:)-বৃন্দ এতে আপত্তি উত্থাপন করেননি। যদি আল্লাহর আশীর্বাদরূপী পবিত্র কুরঅান মজীদ অবতীর্ণ হওয়ার মাস উদযাপনে বিশেষ ব্যবস্থা গ্রহণ ও মসজিদ আলোকিত করার আয়োজন জায়েয হয়, তাহলে আল্লাহতা’লার সর্ববৃহৎ আশীর্বাদ ও করুণা আমাদের প্রিয় মহানবী (দ:)-কে ধরাধামে পাওয়ার মাস (রবিউল আউয়াল) উদযাপনে মসজিদগুলো আলোকিত করায় কোনো আপত্তি থাকতে পারে না।
কিছু কিছু মোহাদ্দেসীন (হাদীস-শাস্ত্র বিশারদ) হযরত আলী (ক:)-এর কথা উদ্ধৃত করেন, যিনি বলেন: “আল্লাহ পাক খলীফা হযরত উমর (রা:)-এর মাযারকে আলোকিত করেন, যেভাবে তিনি আমাদের মসজিদকে আলোকিত করেছিলেন।” [সহিহুল বিহারী]
অতএব, আমরা জানতে পারলাম যে মসজিদগুলো আলোকিত করার প্রতিদানস্বরূপ আমাদের কবরগুলোকেও ইনশা’আল্লাহ আলোকিত করা হবে। এমতাবস্থায় এই প্রথা অনুশীলনে যে ব্যক্তি বাধা দেবে, সে শুধু তার কবরকেই অন্ধকারাচ্ছন্ন করবে না, বরং সাহাবা-এ-কেরাম (রা:)-এর সুন্নাহর বিরোধিতাও করবে। আল-কুরআন এসব লোক সম্পর্কে সতর্কবাণী উচ্চারণ করে: “এবং তার চেয়ে অধিকতর যালেম কে, যে ব্যক্তি আল্লাহর মসজিদগুলোতে বাধা দেয় সেগুলোতে আল্লাহর নামের চর্চা হওয়া থেকে, আর সেগুলোর ধ্বংস সাধনে প্রয়াসী হয়?” [আল-কুরঅান, ২:১১৪; তাফসীরে নূরুল এরফান]
যারা মসজিদে সালাত আদায়, সর্বশক্তিমান আল্লাহতা’লার যিকর-তাযকেরা, কুরঅান শরীফ তেলাওয়াত বা না’ত/নাশীদ আবৃত্তি করাকে নিষেধ করে এবং এর পাশাপাশি মসজিদের শোভা বর্ধনের উদ্দেশ্যে প্রদীপ জ্বালানো, আলোকসজ্জা করা, ম্যাট/কার্পেট বিছানো ইত্যাদিতে বাধা দেয়, তাদেরকে ওপরোক্ত আয়াতে করীমায় তিরস্কার করা হয়েছে; কেননা তাদের এই নিষেধ করা ও বাধা দেয়া প্রকৃতপক্ষে আল্লাহতা’লার মসজিদ ধ্বংসে ইন্ধন-ই যুগিয়ে থাকে।
বর্তমান যুগে মসজিদ অলঙ্করণ, তা সর্বদা আলোকোজ্জ্বল রাখা এবং গুরুত্বপূর্ণ তারিখে তাতে বিশেষ আয়োজন করা এমন কি সাধারণ জ্ঞানেও উত্তম বলে বিবেচিত হয়। তা এ কারণে যে আমরা অহরহ আমাদের বাড়িঘর সাজিয়ে রাখি এবং বিয়ে-শাদীর মতো বিশেষ অনুষ্ঠানগুলোতে সাধারণের বাইরে গিয়ে আলোকসজ্জা করে থাকি। আমাদের ঘরবাড়ি যদি সুশোভিত ও আলোকিত হওয়ার যোগ্যতা রাখে, তাহলে অবশ্যঅবশ্য খোদাতা’লার মসজিদ, যা সব ঘরের মধ্যে উত্তম, তা সুশোভিত হওয়ার দাবি রাখে। কেননা, এতে মসজিদের মাহাত্ম্য মানুষের অন্তরে প্রোথিত হবে। এই প্রথা দ্বীন ইসলাম প্রচারের একটি মাধ্যম এবং মুসলমানদের মাঝে ভক্তিশ্রদ্ধার অনুভূতি জাগিয়ে তোলে।
এছাড়া, অনেক মানুষ মঞ্চ সজ্জিত ও আলোকিত করার বেলায় সর্বাত্মক ব্যবস্থা নেয় এবং একে ‘শান্তি সভা’ বা ‘সীরাহ (সীরাতুন্নবী) সেমিনার’ বলে ডাকে। আল-হামদুলিল্লাহ! আমরা আমাদের অনুষ্ঠানকে মীলাদুন্নবী (দ:) বলে থাকি।
*সমাপ্ত*

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ